ভোক্তা আচরণের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। মুনাফা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করতে হবে। ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করতে হলে তার প্রয়োজন, অভাব, চাহিদা, পছন্দ-অপছন্দ, ক্রয়ক্ষমতা, ক্রয় আচরণ এবং ক্রয় আচরণে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সম্পর্কে বাজারজাতকারীর স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। ভোক্তার আচরণ যথাযথভাবে জানা এবং সঠিক বাজারজাতকরণ কৌশল অবলম্বনের জন্য ভোক্তার আচরণ অধ্যয়ন করতে হবে।
নিম্নে বাজারজাতকরণে ভোক্তা আচরণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো।
১. অভীষ্ট বাজার নির্বাচন (Target market selection) : ডোক্তার আচরণ সংক্রান্ত জ্ঞান বাজারজাতকারীকে অভীষ্ট বাজার বিভাগ নির্বাচন করতে সহায়তা করে। ভোক্তার আচরণ জানার মাধ্যমে বাজারজাতকারী অভীষ্ট বাজার বিভাগের জন্য সঠিক বাজারজাতকরণ কৌশল নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়। তাই অভীষ্ট বাজার নির্বাচনের জন্য ভোক্তার আচরণ অবগত হওয়া প্রয়োজন।
২. বাজার বিভক্তিকরণ (Market segmentation) : ভোক্তার আচরণ সম্পর্কিত ধারণা বাজার বিভক্তিকরণে সহযোগিতা করে। ভোক্তাদের অবস্থান, আয়, রুচি, অভ্যাস, পেশা, বয়স ইত্যাদির কারণে চাহিদা ও প্রয়োজনে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ক্রেতাদের সমন্বয়ে সমগ্র বাজারকে বিভিন্ন উপ-বাজার বিভাগে বিভক্ত করতে হয়। ভোক্তার আচরণ উপলব্ধির মাধ্যমে বাজারজাতকারী সহজে সমগ্র বাজারকে বিভক্তিকরণ করতে পারে।
৩. অবস্থান গ্রহণ (Positioning) : ভোক্তার মনে পণ্যের অবস্থান সৃষ্টির জন্য ভোক্তার নিকট পণ্যের ইমেজ সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন । এজন্য ভোক্তার প্রয়োজন সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে এবং ভোক্তা পণ্যের কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেয় সেটাও জানতে হবে। ভোক্তার আচরণ অধ্যয়নের মাধ্যমে বাজারজাতকারী এ সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
৪. বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা প্রণয়ন (Marketing planning) : সব ধরনের বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ভোক্তা আচরণ সম্পর্কে ধারণার প্রয়োজন হয়। সঠিক বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা প্রণয়নে ভোক্তাদের আচরণ সংক্রান্ত জ্ঞান বাজারজাতকারীকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করে থাকে।
৫. পণ্য ও সেবা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত (Product or service decision) : পণ্য ও সেবা উৎপাদন করা হয় ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য। ভোক্তার আচরণ অধ্যয়নের মাধ্যমে বাজারজাতকারী পণ্য বা সেবা উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংগ্রহ করতে পারে এবং পণ্য বা সেবা উন্নয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করতে পারে। পণ্য, ব্র্যান্ড নাম, মোড়কীকরণ, গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টি, বিক্রয়োত্তর সেবা ইত্যাদি সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভোক্তার আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান সহযোগিতা করে থাকে।
৬. মূল্য সিদ্ধান্ত (Pricing decisions): পণ্য বা সেবার মূল্য ভোক্তার ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মূল্য কম হলে ক্রেতার মনে পণ্যের মান সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে, আবার বেশি হলে ক্রেতা পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকতে পারে। এ ধরনের অবস্থা সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের অন্তরায়। তাই মূল্য সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ভোক্তার আচরণ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন একান্ত প্রয়োজন।
৭. বণ্টন সিদ্ধান্ত (Distribution decisions) : পণ্য ও সেবা সঠিকভাবে বণ্টন করার জন্য ভোক্তাদের প্রয়োজন এবং অবস্থান জানা একান্ত প্রয়োজন। নতুবা প্রয়োজনের সময় এবং সঠিক স্থানে পণ্য না পৌঁছালে ক্রেতারা সেটা ক্রয় করে না। তাই সঠিক বণ্টন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ভোক্তার আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান সহযোগিতা করে থাকে।
৮. প্রসার সিদ্ধান্ত (Promotion decisions) : বাজারজাতকরণ প্রসারের হাতিয়ারসমূহ যেমন- বিজ্ঞাপন, ব্যক্তিক বিক্রয়, বিক্রয় প্রসার এবং গণসংযোগ ইত্যাদি বাজারজাতকরণ কার্যক্রমের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বাজারজাতকারীকে প্রসার সংক্রান্ত কাজের জন্য সঠিক হাতিয়ার নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন। ভোক্তার আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান এক্ষেত্রে বাজারজাতকারীকে সহযোগিতা করে।
উপরোক্ত বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাজারজাতকারীর নিকট ভোক্তা আচরণ একান্ত প্রয়োজন ।